ফি প্রত্যাহারের দাবিতে জবিতে আন্দোলনে পুলিশের হামলা: আহত ২০

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক 
উন্নয়ন ফি প্রত্যাহারের দাবিতে গতকাল সোমবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যংক অবরোধ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। এ সময় পুলিশি বাধায় অন্তত ২০জন আহত হয়। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সোয়া ১০ টায় ছাত্রজোটের নেতা-কর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয় ভাস্কর্য চত্তর থেকে মিছিল নিয়ে অগ্রণী ব্যাংকের সামনে গিয়ে অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ তাদের বাধা দেয়। একপর্যায়ে ধস্তাধস্তিতে ফারুক আহমেদ আবীর, আল আমীন, লাকি আক্তার সহ প্রায় ২০জন আহত হন। গত বছর ভর্তির সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন ফি বাবদ ৫ হাজার টাকা নির্ধারণ করে। তখন ছাত্ররা ফি প্রত্যাহারের দাবি জানায়। প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্রদের আলোচনা সাপেক্ষে ২ হাজার টাকা কমানো হয়। এবং বাকি তিন হাজার টাকা ২০১২-১৩ সেশনে ভর্তির সময় থেকে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চলতি বছরেও ভর্তির ক্ষেত্রে ৩ হাজার টাকা উন্নয়ন ফি ধার্য করেছে। তাই পরশু থেকে আন্দোলন এবং বিক্ষোব মিছিল করে আসছে ঐ সংগঠনের কর্মীরা। অবরোধ শেষে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, দাবী মানা না হলে অবরোধ কর্মসূচী চলতে থাকবে।

প্রক্টর অশোক কুমার শাহা বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা ভর্তিচ্ছুদের টাকা জমা দিতে বাধা দেওয়ায় পুলিশ সদস্যরা ধর্যের সাথে তাদের প্রতিহত করে। কোন হতাহতের ঘটনা সেখানে ঘটেনি। আন্দোলনের নামে ব্যাংক অবরোধ করা আইনবিরোধী। তবে, যেকোন ছাত্রসংগঠন প্রশাসনের সাথে আলোচনায় বসতে চাইলে প্রশাসন তাদের সাথে বসবে। বিশৃঙ্খলা কোন আন্দোলনের রূপ হতে পারেনা।

এ বিষয়ে ট্রেজারার, অধ্যপক মো: সেলিম ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি আমরা জানতে পেরেছি। ছাত্রদের সাথে দ্রুত আলোচনায় বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

রেজিষ্ট্রার প্রকৌশলী ওহেদুজ্জামান বলেন, ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য আগামীকাল (আজ) থেকে অগ্রনী ব্যাংক, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সহ ইসলামপুর শাখায় ও টাকা জমা দেওয়া যাবে।

জবিতে উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবর্ষ ভর্তিতে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে নেওয়া উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিলসমাবেশ করেছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট। গতকালার বেলা ১টায় মুক্তিযোদ্ধা ভাস্কর চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ শেষে একই স্থানে সমাবেশ করে ঐ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা।

সমাবেশে বক্তারা দাবি করেন, গত বছর ভর্তির সময় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উন্নয়ন ফি বাবদহাজার টাকা নির্ধারণ করে। তখন ছাত্ররা ফি প্রত্যাহারের দাবি জানায়। প্রশাসনের সঙ্গে ছাত্রদের আলোচনা সাপেক্ষেহাজার টাকা কমানো হয়। এবং বাকি তিন হাজার টাকা ২০১২-১৩ সেশনে ভর্তির সময় থেকে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চলতি বছরেও ভর্তির ক্ষেত্রেহাজার টাকা উন্নয়ন ফি ধার্য করেছে। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে উন্নয়ন ফি বাতিলের দাবি জানান।

বিষয়ে ট্রেজারার, অধ্যপক মো: সেলিম ভূঁইয়া বলেন, বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। আমরা ছাত্রদের সাথে দ্রুত আলোচনায় বসব। তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠু ভাবে প্রথমদিনের সাক্ষাতকার গ্রহণ করা হয়েছে। ভর্তির বিষয়ে যেকোন ধরনের দূর্নীতি কঠোর হস্তে দমন করবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন।

শীতার্তদের পাশে জবি মনোবিজ্ঞান বিভাগ এবং সাংবাদিক সমিতি

শীতার্ত দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়(জবি) মনোবিজ্ঞান বিভাগ এবং সাংবাদিক সমিতি। দেশব্যাপী হাঁড়কাপানো শীতের মধ্যে উত্তরাঞ্চলের শীতার্ত দরিদ্র মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। 

গত বৃহস্প্রতিবার শীতবস্ত্র বিতরণের জন্য মনোবিজ্ঞান বিভাগের একঝাক তরুণ এবং সাংবাদিক সমিতি সদস্যদের একটি দল রাতে দিনাজপুর যায় এবং শুক্রবার ও শনিবার তারা ওই এলাকার পার্বতীপুরের নতুন বাজার এলাকায় শীর্তাত মানুষের মাঝে শীতের কম্বল, জ্যাকেট ও সোয়েটার বিতরণ করেন। শীতবস্ত্র বিতরণকালে সেখানে পার্বতীপুরে স্থানীয় ”ইয়াং স্টার ক্লাব” তাদের সহযোগীতা করেন।

এ প্রসঙ্গে সাংবাদিক সমিতির সভাপতি সোলাইমান সালমান বলেন, ”একটি ছোট সংগঠন হওয়া সত্বেও আমাদের যতটুকু সার্মথ্য ছিলো তা দিয়ে আমরা শীতার্ত ও দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। আশা করি আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস দেখে সমাজের ভিত্তবানরা শীর্তাত মানুষের প্রতি তাদের সাহায্যর হাত বাড়াবেন”।

এক ছাত্রের সনদ বাতিল; এক ছাত্রের সনদ বাতিল

বিশ্বজিৎ দাশ নিহত হওয়ার ঘটনায় আরো তিন ছাত্রকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং এক ছাত্রের সনদ বাতিল করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়ে ১০ ছাত্রকে বহিষ্কার এবং ৩ সাবেক ছাত্রের সনদ বাতিল করল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে জড়িত থাকার অভিযোগে ওই তিনজনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এরা হচ্ছে আজিজুর রহমান, পিতা : শেখ আব্দুল মান্নান, (দর্শন বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ : ২০০৬-০৭); রফিকুল ইসলাম, পিতা : নূর মিয়া মোল্লা, (রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, শিক্ষাবর্ষ : ২০০৮-০৯); এইচ এম কিবরিয়া, পিতা : আতিকুর রহমান হাওলাদার, (মনোবিজ্ঞান বিভাগ, শিক্ষাবষর্ : ২০০৬-০৭)। এছাড়া খন্দকার মো. ইউনূস আলীর (শিক্ষাবর্ষ ২০০২-০৩, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ) সনদ বাতিল করা হয়েছে।
এর আগে একই অভিযোগে গত বছরের ২০ ডিসেম্বর মো. কাইয়ুম মিয়া (টিপু), রাজন তালুকদার, মো. সাইফুল ইসলাম এবং জি এম রাশেদুজ্জামান (শাওন) নামে চারজন ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয় এবং গত ১২ ডিসেম্বর মোহাম্মাদ মাহফুজুর রহমান (নাহিদ) ও মো. ইমদাদুল হক নামে দুজন ছাত্রের সনদ বাতিল করা হয় এবং মো. রফিকুল ইসলাম (শাকিল), মীর মো. নূরে আলম ও মো. ওবাইদুল কাদের নামে তিনজন ছাত্রকে বহিষ্কার করা হয়।

জবি প্রস্তাবিত ছাত্রী নিবাসে রিকশার গ্যারেজ; প্রসাশনের আশ্বাস: বর্তমান অর্থবছরেই ভবন তৈরির কাজ শুরু হবে


জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক
এখনও বেদখলে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রস্তাবিত ছাত্রীনিবাস এর জমি। জায়গাটি রিকশার গ্যারেজ নামে পরিচিত। সরজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন প্রায় একশত রিকশা রাখা হয় সেখানে। বিশ্বববিদ্যালয়ের অনকূলে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত প্রদানের বিষয়টি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হলেও দখলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তবে বর্তমান অর্থবছরেই ভবন তৈরির কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন।

উপাচার্য অধ্যপক ড. মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ এর নের্তৃত্বে বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গত বছর ১০ অক্টোবর, ২০১২, তারিখে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব স্বাক্ষরিত প্রেরিত অনুলিপি অনুসারে ৩/১ জনসন রোডস্থ (১নং খাস খতিয়ানের, সি, এস-৮৮, এস,এ-৬৮১, আর,এস-১০৩১ এবং মহানগর ৩৩০ নং দাগের ০.৩৪২২ একক) ‘খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত’ নীতিমালার ৩.০ (গ) অনুচ্ছেদ অনুসারে জগন্নাথ বিশ্বববিদ্যালয়ের অনকূলে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত প্রদানের বিষয়টি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। কিছুদিন জায়গাটি জনসাধারনের জন্য নিষিদ্ধ করে গেট বন্ধ করে দেওয়া হলেও আবার রিকশার গ্যারেজে পরিনত হয়েছে প্রস্তাবিত ছাত্রীনিবাসের জায়গাটি। শিক্ষার্থীদের দাবী প্রসাশনের অবহেলার কারণে বেদখল রয়ে আছে হলের জমি। জায়গাটি যাতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান দখল করতে না পারে এজন্য ঐ বছরের গোড়ার দিকে জবির শিক্ষার্থীরা জায়গাটিতে ছাত্রী হলের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার প্রকৌশলী মো: ওহিদুজ্জামান বলেন, আমরা বরাদ্দ টাকা জমা দিয়েছি। এই মাসেই ঐ জায়গায় প্রহরী নিযুক্ত করার কথা থাকলেও সম্ভব হয়নি। আশা করছি আগামী মাসের মধ্যে আমরা জমি দখলে নিয়ে নিব। তিনি আরও বলেন, ছাত্রীনিবাস তৈরি কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেনীর কমচারীরা সেখানে অস্থায়ীভাবে থাকবে। বর্তমান অর্থবছরে ছাত্রীনিবাস ভবন তৈরির কাজ শুরু করা হতে পারে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

বিশ্ববিদ্যালয় ট্রেজারার, মো: সেলিম ভূঁইয়া বলেন, প্রস্তাবিত ছাত্রীনিবাসের জমির দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তে সরকারের পক্ষ থেকে ১৫কোটি টাকা ব্যায় নির্ধারণ করা হয়। নিতীমালা অনুযায়ী দশ পার্সেন্ট, দেড় কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। একটি পক্ষ ঐ জমির পক্ষে রিট আবেদন করেছিল। তবে আমরা নিশ্চিত অতি শিগ্রহী আমরা জমির দখল পেয়ে যাব। তিনিও বর্তমান অর্থবছরে ছাত্রীনিবাস ভবন তৈরির কাজ শুরু করার আশ্বাস দেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঐ জমির মালিকানা দাবী করে আসছেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী দুই বন্ধু হাজী মো: শাহীবুল্লাহ ভূঁইয়া এবং হাজী মো: নাজিমুদ্দিন। শাহীবুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ১৯৯২ সালে আমরা উক্ত জমি সুনীল কুমার বসাক নামের ভদ্রলোকের কাছ থেকে কিনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকুলে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দেওয়া হলেও বর্তমান মালিক আমরা। ২০১২ জুন, ০৪ তারিখে সুনীল বসাক জমিটির মালিকানা দাবী করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন (রিট পিটিশন নং. ১৩৬২ অব ২০১২)। রিটের বিবাদী (১)বাংলাদেশ ভুমি মন্ত্রলায়, (২) ঢাকা জেলা প্রশাসক, এবং (৩) খালিদ হামিদুল হক চৌধুরী।
ঢাকা জেলা প্রশাসক, শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, সঠিক আইনানুগ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মালিক জমির দখল পাবে। এটা সম্পূর্ণ আইনগত বিষয়।

হল উদ্ধারে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করে আসছে বলে জানা যায়। নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ওসমান গণি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্বলতার কারণেই ছাত্রীনিবাস ভবন তৈরির কাজ স্থগিত হয়ে আছে। মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মনজুর মোর্শেদ বলেন, বিভিন্ন হল আন্দোলনের সময়ে প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও আমরা কিছুই পাইনি।