ক্যানসার প্রতিরোধে ত্রিফলা

ক্যানসারের মতো মারণ রোগের বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে প্রাচীন আয়ুর্বেদকেই এ বার হাতিয়ার করতে চাইছেন বিজ্ঞানীরা। আমেরিকার ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এক দল বাঙালি বিজ্ঞানীর সাম্প্রতিক গবেষণায় ধরা পড়েছে, ম্যালিগন্যান্ট টিউমার ছড়ানো রুখতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে ত্রিফলা চূর্ণের। দীর্ঘ দিন নিয়মিত ত্রিফলা চূর্ণ সেবনে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ক্যানসার প্রতিরোধ সম্ভব বলে তাঁরা দাবি করেছেন। মারণ রোগের মোকাবিলার ক্ষেত্রে এই ত্রিশক্তির দাপটের বিষয়টি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক সায়েন্স জার্নাল ‘প্লস ওয়ান’-এ প্রকাশিত হয়েছে।

ত্রিফলা অর্থাৎ আমলকী, হরীতকী আর বয়ড়া। কী তাদের ভূমিকা?
বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, দেহে নতুন রক্তজালিকা বা ক্যাপিলারি সৃষ্টির প্রক্রিয়াকে বলা হয় অ্যাঞ্জিওজেনেসিস। এর থেকেই অনেকাংশে ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের জন্ম হয়ে থাকে। অথবা আগে থেকে কোনও ম্যালিগন্যান্ট টিউমার থাকলে তার বৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দেয় অ্যাঞ্জিওজেনেসিস প্রক্রিয়া। চিকিৎসার পরিভাষায় যার নাম, ভাস্কুলার এন্ডোথেলিয়াল গ্রোথ ফ্যাক্টর। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, রক্তজালিকার ওই বৃদ্ধি শুধু ক্যানসার নয়। রেটিনোপ্যাথি (রেটিনার ক্ষয়) এবং এন্ডোমেট্রিওসিস (মহিলাদের এক ধরনের অসুখ, যা থেকে বন্ধ্যাত্বও হতে পারে)-এর জন্যও দায়ী। ত্রিফলা এই রক্তজালিকা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকেই রোধ করতে সাহায্য করে।

 রক্তজালিকা বাড়ার সঙ্গে ক্যানসারের সম্পর্ক কী?
ক্যানসার বিশেষজ্ঞেরা বলছেন শরীরের যে গ্রন্থিতে ক্যানসার হয়, সেগুলিতে অতিরিক্ত কোষ বিভাজনের ফলে টিউমার তৈরি হয়। কোষ বিভাজন যত দ্রুত হয়, তত বেশি করে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। টিউমারের কোষগুলিতে খাদ্য সরবরাহ করে রক্তজালিকা। তাই টিউমার যত বড় হতে থাকে, ততই সংখ্যা বাড়ে রক্তজালিকারও। এ বার ওই রক্তজালিকার সংখ্যা কোনও ভাবে কমিয়ে আনা গেলে টিউমারের কোষগুলিতে রক্ত সরবরাহ কমে যায়। ফলে ওই কোষগুলি তখন আর পর্যাপ্ত অক্সিজেন এবং খাদ্য পায় না। তাই এক সময় ওরা মরে যায়। রক্তজালিকার বাড়বৃদ্ধি আটকে দিয়ে টিউমারের কোষগুলো মেরে ফেলার এই কাজটাই করে ত্রিফলা।

বর্তমানে অ্যাঞ্জিওজেনেসিস আটকানোর জন্য ওষুধ বাজারে রয়েছে ঠিকই। সেটা প্রথমত বেশ দামি। ক্যানসার চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, ইঞ্জেকশনটির একটি কোর্স শেষ করতেই খরচ হয় লক্ষাধিক টাকা। দ্বিতীয়ত, ওই ওষুধ চিকিৎসকেরা সচরাচর ব্যবহার করতে চান না। কারণ ওষুধটির নিজেরই টক্সিক এফেক্ট (এক ধরনের বিষক্রিয়া) রয়েছে। তা ছাড়া এর কার্যকারিতাও ২০ থেকে ৩০ শতাংশের বেশি নয়। তা সত্ত্বেও বাঁচার আশায় অনেকে সর্বস্বান্ত হয়েও ওই চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন।
ওহায়ো স্টেট ইউনিভার্সিটিতে বাঙালি বিজ্ঞানীদের যে দলটি ত্রিফলার গুণ নিয়ে গবেষণা চালিয়েছে, সুজিত বসু তার প্রধান।  ওহায়ো-তে তাঁর সহযোগী গবেষকরা হলেন দেবাঞ্জন চক্রবর্তী এবং চন্দ্রাণী সরকার। সুজিতবাবু বলেন, “বিজ্ঞানের এত উন্নতি সত্ত্বেও ক্যানসার রোগটাকে কোনও ভাবে কব্জা করা যাচ্ছে না। এই হতাশা আমাদের সকলের। তবে ত্রিফলার গুণ আমরা প্রমাণ করতে পেরেছি।” ইতিমধ্যেই ইঁদুরের দেহে সেটা সফল ভাবে পরীক্ষা চালিয়ে দেখাও হয়েছে। কী রকম? প্রথমে ইঁদুরের দেহে মানুষের দেহের ক্যানসারবাহী টিউমার কোষ প্রবেশ করানো হয়। তার পর সেই ইঁদুরকে প্রতি দিন ১০০ মিলিগ্রাম করে ত্রিফলা চূর্ণ খাওয়ানো হতে থাকে। সুজিতবাবুর দাবি, “ত্রিফলার প্রভাবে ওই ইঁদুরের দেহে পাকস্থলীর ক্যানসার, লিম্ফোমা এবং প্যাংক্রিয়াসে ক্যানসার ছড়িয়ে পড়া আটকানো গিয়েছে।” অথচ ইঁদুরের দেহের অন্য কোনও অংশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন কিংবা ন্যূনতম বিষক্রিয়াও প্রমাণিত হয়নি বলে জানান তিনি।

অ্যাঞ্জিওজেনেসিস কী?
দেহে নতুন রক্তজালিকা তৈরির প্রক্রিয়া, যা ম্যালিগন্যান্ট টিউমার তৈরি করে বা ইতিমধ্যেই থাকা ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের বৃদ্ধির হার বাড়িয়ে দেয়।
ক্যানসার ঠেকাতে ত্রিফলার কার্যকারিতার খবরে যারপরনাই উত্তেজিত আয়ুর্বেদিক চিকিৎসকেরাও। তাঁদের বক্তব্য, যুগ যুগ ধরে এই তিনটি ফলের উপকার পেয়ে আসছেন। পেটের নানা রোগ সারাতে তো বটেই, হার্টের সমস্যা দূর করতেও ত্রিফলার গুণ প্রমাণিত। আয়ুর্বেদ চিকিৎসক অমলকান্তি ভট্টাচার্য বলেন, “নতুন কিছু বলেননি ওঁরা। চরক সংহিতাতেই লেখা রয়েছে ত্রিফলা হল ত্রিদোষ অর্থাৎ বায়ু, পিত্ত, কফের যাবতীয় সমস্যা নাশক। দুঃখের বিষয়, বিদেশ থেকে সার্টিফিকেট না দিলে এখানে কেউ কদর করে না।” একই কথা আয়ুর্বেদ চিকিৎসক মৃণালকান্তি ত্রিপাঠীরও। তাঁর দাবি, “প্রতিদিন খালি পেটে ত্রিফলা ভেজানো জল বা এক চামচ ত্রিফলা চূর্ণ নবজন্ম দিতে পারে।”



জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঝিলমিল প্রকল্পে জমি প্রদানে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস

Sheikh_Hasina
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ঝিলমিল প্রকল্পে জমি প্রদানের বিষয়টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনা। ০৭ অক্টোবর রবিবার সকাল ১১.৩০টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দ প্রধানমনত্রীর সাথে তার নিজস্ব কার্যালয়ে এক সৈজন্য সাক্ষাতে মিলিত হলে প্রধানমন্ত্রী এ আশ্বাস দেন। এবং একই সাথে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের আবসান সমস্যাটি অত্যন্ত গুরুত্ব দেন এবং এ সমস্যা আশু সমাধানের ব্যাপারেও আশ্বাস দেন।

শিক্ষক সমিতির নেতৃত্ব দেন সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মোঃ সেলিম। আনুষ্ঠানিক আলোচনা সভার শুরুতে জবি শিক্ষক সমিতির সহ-সভাপতি অধ্যাপক ড. এস. এম. আনোয়ারা বেগম এবং সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. কাজী সাইফুদ্দীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান। এসময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নব-নির্বাচিত শিক্ষক সমিতির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্যবৃন্দকে অভিনন্দন জানান।

সভায় সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট উপস্থাপন করেন। এসময় শিক্ষক সমিতি বিশ্ববদ্যিালয়ের ছাত্রছাত্রীদের হল, শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের আবাসন, পরিবহন সমস্যা, হল উদ্ধার এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন উন্নয়নের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। প্রধানমন্ত্রী ধৈর্য্য সহকারে বিভিন্ন সমস্যার কথা শোনেন এবং তা পর্যায়ক্রমে সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন।

বাধ ভাঙল আলোচনা সমালোচনার: জবি ছাত্রলীগের নতুন কমিটি

মনিরুজ্জামান
আলোচনা সমালোচনার বাধ ভেঙে অবশেষে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষনা করা হল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের। এফ.এম শরিফুল ইসলাম শরিফ কে সভাপতি এবং এস.এম সিরাজুল ইসলাম কে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের তোরণদার হিসেবে মনোনীত করা হয়েছে। বুধবার সন্ধা সাতটায় এই কমিটি গঠিত হয়েছে বলে ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে। এই কমিটির কার্যকাল হবে এক বছরের জন্য।

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারে খুশির ঢল নেমেছে। বুধবার রাত সাড়ে ৭টায় ঘোষনা পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শুরু হয় সংবর্ধনা মিছিল। নেতা কর্মীদের নিজ নিজ প্যানেলে বিজয় মিছিলে মুখরিত হয়ে ওঠে ক্যাম্পাস। সহস্রাধিক নেতাকর্মী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে আনন্দ মিছিলে যোগ দেন। ২০০৫ সালে ২০ অক্টবর ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রুপান্তরিত হওযার পর আজ প্রথমবারের মত নতুন করে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জবি শাখার কমিটি হল।

এই কমিটি হওয়ায় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, আহ্বায়ক কমিটির মেয়াদ উর্ত্তীণ হওয়ায় এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জবি শাখার ছাত্রলীগের নব সভাপতি এস এম শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, আমরা খুব খুশি। বিশ্ববিদ্যালয়কে আমরা ভালো ভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবো এই প্রত্যাশা রাখি।

তবে এই বিষয়ে ছাত্রলীগের জবি শাখার আগের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক নিজামউদ্দিন বলেন, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কমিটি করবে এই মর্মে জানানো উচিত ছিল। তবে আমাদেরকে না জানিয়ে এই কমিটি হয়েছে বলে আমরা কান মুখে শুনেছি। আমাদেরকে তাও জানানো হয়নি।

একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, গতমাসের ১৭ সেপ্টেম্বর সাড়ে ১১ টায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রদলের নতুন কমিটির নেতাকর্মীকে মিষ্টিমুখ করে নেওয়ায় জবি শাখার ছাত্রলীগের নতুন কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ায় মিষ্টি বিতরণ ও ফুলেল শুভেচ্ছা জানানোর পরে এই বিশ্ববিদ্যালয় শাখার ছাত্রলীগকে কেন্দ্রীয় শাখার ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দদের খারাপ দৃষ্টিতে দেখচ্ছিল। তাই এই কমিটি গঠিত হয়েছে।

উল্লেখ্য, জগন্নাথ কলেজ থাকাকালীন গঠিত সর্বশেষ কমিটি ২০১১ পর্যন্ত প্রায় নয় বছর অবস্থান করে। তারপর ঐ বছরের মাঝামাঝি সময় অসম্পূর্ণ এক আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হয় যা অবস্থান করে এক বছরের বেশি সময় ধরে।

বেহাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে একটি পরিবার

মো: মনিরুজ্জামান
যে  কোন বস্তু, বিষয়, পরিবেশ, অথবা যে কোন একটি সাবজেক্ট ভাল কি মন্দ তা বিচার করা হয় আর একটি সমগোত্রিয়ের সাথে তুলনা করে। রাত না থাকলে দিন কি বোঝা যায়না, আবর্জনা না থাকলে পরিচ্ছন্নতা বোঝা যায়না। একটি শহর কতটুকু বসবাস যোগ্য তা অন্য কোন মডেল শহরের পরিবেশের সাথে তুলনা করে বলা যায়। কেও যদি কোনদিন মিষ্টি আম না খায় তাহলে টক আম ই তার কাছে সুস্বাধু লাগবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কতটা মানসম্মত তা অন্যন্য বিশ্ববিদ্যালয় দেখে বোঝা যাবে। প্রত্যেকটি বৈশিষ্টের একটি মডেল মাপকাঠি থাকে, যা দেখে অন্যন্যগুলো পরিমাপ করা যায়। ধরা যাক বাংলাদেশের মডেল বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তার সাথে তুলানা করে অন্যন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অবস্থা বিচার করা যায়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে, তার পরও সাধারন কিছু বিষয়ে সমগোত্রিয়দের মাধ্যে মিল থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা:
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত ২০০৫ সনের ২৮নং আইনের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ সরকারি কলেজটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় এবং ২০০৫ এর ২০ অক্টোবর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০০৬ তারিখে উপাচার্য নিয়োগের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয়। বিলুপ্ত সরকারি জগন্নাথ কলেজ ক্যাম্পাসের ১১.১১ একর (প্রায়) জমির উপর বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত।

সংকট সমুহ:
প্রায় আট বছর আগে প্রতিষ্টিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোন আবাসিক হল। পরিবহন সংস্থার একই অবস্থা। প্রায় পচিশ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য হাতে গোনা কয়েকটি পরিবহন বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষদের ও সেই একই অবস্থা। শিক্ষদের ও নেই কোন আবাসিক ব্যাবস্থা।

প্রবাদ বাক্যে বলা হয়, “আপনি বাঁচলে বাপের নাম” শিক্ষদের যখন বেহাল অবস্থা তখন শিক্ষার্থীদের পাঠদানের প্রতি সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয় এরকম মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।

ইউজিসি সূত্র মতে, যেখানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ছাত্র অনুপাত ১:৪; কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:৮; হাজি দীনেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:১৩; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:১৫; বুয়েটে ১:১৮; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:২৮; সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষ ছাত্র অনুপাতের সঠিক অনুপাত বর্তমানে ১:৭০। এ পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ।

এবার ছাত্ররাজনীতি:
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তৃতীয় অবস্থানে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির কি দশা তা দেশ-দশের সবাই মোটামুটি জানেন। ক্যাম্পাসের পরিধি ছোট হওয়ায় এখানে গ্যাদারিংটা একটু বেশি। আর প্রতিনিয়ত লেগেই আছে  মারধরের মত জঘন্ন ঘটনা। এসব ঘটনা ঘটছে সঠিক রানৈতিক চর্চার অভাবে। ছাত্র সংগঠন একটি দেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারযোগ্য। তৃণমূল পর্যায় থেকে সঠিক শিক্ষা নিয়ে একসময় এরাই দেশের হাল ধরবে। কিন্তু সেই মহৎ দায়ীত্ব গ্রহণ করতে যেয়ে যদি হাসপাতালের বেডে সময় কাটাতে হয়, তাহলে, পরত পক্ষে দেশটাই হাসপালের রোগীর আকার ধারণ করবে। বিশ্বদ্যিালয পড়–য়া শিক্ষার্থীদের বাবা-মা, আত্বীয়-স্বজন সন্তানকে উচ্চশিক্ষা প্রদান করতে বুকের নাড়ি ছেড়া ধনকে পাঠাচ্ছে বিভিন্ন পালিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজেকে বাবা-মা ও স্থানে বসিয়ে সন্তানকে হাসপাতালের বেডে দেখতে কেমন লাগে তা শুধু আমাদের বাবা-মা রাই জানেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত তিন মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে মারধর, সাংবাদিকের উপর হামলা, পুলিশ ও পরিবহন শ্রমিক কাছে বেদম প্রহার, যুগ্ম আহ্বায়কের উপস্থিতিতে কর্মীকে ছুরিকাঘাত, এসব ধারাবাহিক ঘটনায় প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত এমনকি শিক্ষকরা ও লাঞ্চিত হতে বাদ পড়েননি।

এহেন বেহাল পরিস্থিতিতে ও হাল ছাড়েনি জগন্নাথ পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের পিতৃতুল্য মহামান্য উপাচার্য ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যলয়ের সার্বিক উন্নতির জন্য লড়াই করে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম এবং নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির দিকেও তাকিয়ে আছে এই পরিবার। এখন শুধু অপেক্ষা, কবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ, ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের আসে সেই শুভ দিন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যলয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব নন ভায়োলেন্স’ উপলক্ষে সেমিনার অনুষ্ঠিত

০২ অক্টোবর ২০১২, মঙ্গলবার সাউথ এশিয়ান স্টাডি সার্কেল-এর উদ্যোগে ‘ইন্টারন্যাশনাল ডে অব নন ভায়োলেন্স’ উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মিলনায়তনে এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে জ্ঞান চর্চা, জ্ঞান আহরণ ও বিতরণে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। শান্তি বিঘ্নিত হয় এমন কোন কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে। শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য মানবিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী হয়ে মহাত্মা গান্ধীর ন্যায় অহিংসনীতি অনুসরণ করতে হবে। সমাজের শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ভাষা, সংস্কৃতি ও কৃষ্টি ইত্যাদি একই সূত্র গেঁথে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটাতে হবে। কোন্ ধরনের দর্শন অবলম্বন করলে সমাজের শান্তি ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা হয় সে বিষয়ে গবেষণা ও পর্যালোচনা করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।”

আলোচকের বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘর্ষ বিভাগের অধ্যাপক ড. ডালেম চন্দ্র বর্মন বলেন, “পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা কঠিন কাজ হলেও কোন না কোন সময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে। সেলক্ষ্যে প্রতিটি মানুষকে মহাত্মা গান্ধীর জীবনাচরণ অনুসরণ করতে হবে। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র      নৃ-গোষ্ঠী থেকে শান্তির চর্চা শুরু করলেই তা প্রকারান্তরে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।”

দৈনিক সমকাল পত্রিকার সম্পাদকীয় শাখার প্রধান জনাব অজয় দাসগুপ্ত বলেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একাত্তরে গোটা বাঙালী জাতিকে একত্রিত করেছিলেন। তাঁর ডাকে স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল। কত লক্ষ বাঙালী নিহত হয়েছিল, কত মা-বোনের ইজ্জত লুণ্ঠিত হয়েছিল তা সংখ্যার বিচারে নয় একাত্তরে মানবতাবিরোধী কাজ করেছিল পাক সেনারা-এটাই চরম সত্য। এই মানবতাবিরোধী কাজের সাথে জড়িত ছিল এদেশের একশ্রেণীর রাজাকার, আল-বদর, আল-শাম্স। সেই রাজাকার, আল-বদর, আল-শাম্সদের দ্রুত বিচার করতে হবে।”

স্বাগত বক্তব্যে সাউথ এশিয়ান স্টাডি সার্কেলের পরিচালক এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-কল্যাণ পরিচালক অধ্যাপক ড. অরুণ কুমার গোস্বামী বলেন, “মহাত্মা গান্ধীর ন্যায় অহিংস নীতির মাধ্যমে সমাজের মানুষের সেবা করে এগিয়ে যেতে হবে। দল, মত, গোষ্ঠী, নির্বিশেষে সকলের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রভাষক জনাব মোঃ আবু সালেহ সেকান্দার ‘একাত্তরের নারী নির্যাতন সম্পর্কে শর্মিলা বসুর মন্তব্য ঃ একটি পর্যালোচনা’ শীর্ষক গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। তাঁর গবেষণার বিষয়ের মূল প্রতিপাদ্য হলো একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনা কর্তৃক নারী নির্যাতন সম্পর্কে শর্মিলা বসুর বক্তব্যের পর্যালোচনা। জনাব মোঃ আবু সালেহ সেকান্দার বলেন, “শর্মিলা বসু একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে পাক সেনা কর্তৃক নির্যাতনের যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা আদৌও সঠিক নয়। সেটি কেবল পাকিস্তানে প্রকাশিত কিছু জার্নাল, বই, পত্র-পত্রিকা থেকে উদ্ধৃত্ত কিছু উদ্ভট ও বানোয়াট তথ্য ছাড়া আর কিছুই নয়।”

এছাড়াও সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক জনাব মোঃ ময়েনুল হক-এর ‘পিস র্পাসপেকটিভস্ ইন সাউথ এশিয়া: এ থিওরিটিক্যাল আন্ডারস্ট্যান্ডিং’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ এন্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদের ডিন এবং এশিয়ান স্টাডি সার্কেলের উপদেস্টা অধ্যাপক ড. আবু জাফর মোহাম্মদ রুহুল মোমেন। সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস্ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব কাজী মোঃ নাসিরউদ্দীন এবং সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক জনাব শিল্পি রানী দে।
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক মন্ডলী এবঙং ছাত্রছাত্রী উপস্থিত ছিলেন।