REPORTS OF HALLS

                                ছাত্রীনিবাস


এখনও বেদখলে রয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে প্রস্তাবিত ছাত্রীনিবাস এর জমি। জায়গাটি রিকশার গ্যারেজ নামে পরিচিত। সরজমিনে দেখা যায়, প্রতিদিন প্রায় একশত রিকশা রাখা হয় সেখানে। বিশ্বববিদ্যালয়ের অনকূলে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত প্রদানের বিষয়টি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হলেও দখলে নেয়নি কর্তৃপক্ষ। তবে বর্তমান অর্থবছরেই ভবন তৈরির কাজ শুরুর আশ্বাস দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রসাশন।
উপাচার্য অধ্যপক ড. মেসবাহ উদ্দিন আহমেদ এর নের্তৃত্বে বিশ্ববিদ্যলয় কর্তৃপক্ষের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় গত বছর ১০ অক্টোবর, ২০১২, তারিখে ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব স্বাক্ষরিত প্রেরিত অনুলিপি অনুসারে ৩/১ জনসন রোডস্থ (১নং খাস খতিয়ানের, সি, এস-৮৮, এস,এ-৬৮১, আর,এস-১০৩১ এবং মহানগর ৩৩০ নং দাগের ০.৩৪২২ একক) ‘খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত’ নীতিমালার ৩.০ (গ) অনুচ্ছেদ অনুসারে জগন্নাথ বিশ্বববিদ্যালয়ের অনকূলে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত প্রদানের বিষয়টি সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। কিছুদিন জায়গাটি জনসাধারনের জন্য নিষিদ্ধ করে গেট বন্ধ করে দেওয়া হলেও আবার রিকশার গ্যারেজে পরিনত হয়েছে প্রস্তাবিত ছাত্রীনিবাসের জায়গাটি। শিক্ষার্থীদের দাবী প্রসাশনের অবহেলার কারণে বেদখল রয়ে আছে হলের জমি। জায়গাটি যাতে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান দখল করতে না পারে এজন্য ঐ বছরের গোড়ার দিকে জবির শিক্ষার্থীরা জায়গাটিতে ছাত্রী হলের সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয়।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার প্রকৌশলী মো: ওহিদুজ্জামান বলেন, আমরা বরাদ্দ টাকা জমা দিয়েছি। এই মাসেই ঐ জায়গায় প্রহরী নিযুক্ত করার কথা থাকলেও সম্ভব হয়নি। আশা করছি আগামী মাসের মধ্যে আমরা জমি দখলে নিয়ে নিব। তিনি আরও বলেন, ছাত্রীনিবাস তৈরি কাজ শুরুর আগ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেনীর কমচারীরা সেখানে অস্থায়ীভাবে থাকবে। বর্তমান অর্থবছরে ছাত্রীনিবাস ভবন তৈরির কাজ শুরু করা হতে পারে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় ট্রেজারার, মো: সেলিম ভূঁইয়া বলেন, প্রস্তাবিত ছাত্রীনিবাসের জমির দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্তে সরকারের পক্ষ থেকে ১৫কোটি টাকা ব্যায় নির্ধারণ করা হয়। নিতীমালা অনুযায়ী দশ পার্সেন্ট, দেড় কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। একটি পক্ষ ঐ জমির পক্ষে রিট আবেদন করেছিল। তবে আমরা নিশ্চিত অতি শিগ্রহী আমরা জমির দখল পেয়ে যাব। তিনিও বর্তমান অর্থবছরে ছাত্রীনিবাস ভবন তৈরির কাজ শুরু করার আশ্বাস দেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ঐ জমির মালিকানা দাবী করে আসছেন পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী দুই বন্ধু হাজী মো: শাহীবুল্লাহ ভূঁইয়া এবং হাজী মো: নাজিমুদ্দিন। শাহীবুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ১৯৯২ সালে আমরা উক্ত জমি সুনীল কুমার বসাক নামের ভদ্রলোকের কাছ থেকে কিনেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকুলে দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দেওয়া হলেও বর্তমান মালিক আমরা। ২০১২ জুন, ০৪ তারিখে সুনীল বসাক জমিটির মালিকানা দাবী করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন (রিট পিটিশন নং. ১৩৬২ অব ২০১২)। রিটের বিবাদী (১)বাংলাদেশ ভুমি মন্ত্রলায়, (২) ঢাকা জেলা প্রশাসক, এবং (৩) খালিদ হামিদুল হক চৌধুরী।
ঢাকা জেলা প্রশাসক, শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, সঠিক আইনানুগ প্রক্রিয়ায় প্রকৃত মালিক জমির দখল পাবে। এটা সম্পূর্ণ আইনগত বিষয়।
হল উদ্ধারে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলাকে দায়ী করে আসছে বলে জানা যায়। নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ওসমান গণি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দুর্বলতার কারণেই ছাত্রীনিবাস ভবন তৈরির কাজ স্থগিত হয়ে আছে। মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মনজুর মোর্শেদ বলেন, বিভিন্ন হল আন্দোলনের সময়ে প্রশাসন আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন। কিন্তু এখনও আমরা কিছুই পাইনি।                                

                       হাবিবুর রহমান হল


২০১১ সালের শেষের দিকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বেদখল হয়ে থাকা হাবিবুর রহমান হলের দখল ফিরে পায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মিজানুর রহমান নামে এক ব্যক্তি হলটি দখল করেছিলেন। পুরান ঢাকার বংশালের গোলকপাড় লেনে হলটি অবস্থিত। হলের জায়গার পরিমাণ এক বিঘা। তিনি বলেন, দীর্ঘ চার বছর চেষ্টার পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় বেদখল ১১টি হলের একটি ফিরে পেল।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিরলস ও ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকার ড. হাবিবুর রহমান হল/হলের জায়গা (ঠিকানা: ৩৫, ৩৬, ৩৭ গোলক পাল লেন, মালিটোলা, বংশাল, ঢাকা) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে একসনা মেয়াদী ইজারা প্রদান করে এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গত অক্টোবর ২০১১-এ হল/হলের জায়গা দখল বুঝে পাওয়া যায়। অত:পর উক্ত হলের জরাজীর্ণ ও ঝুকিপূর্ণ স্থাপনাসহ হলের অভ্যন্তরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা আবর্জনা অপসারণের অনুরোধ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বরাবর পত্র দেয়া হয়। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া ড. হাবিবুর রহমান হল/হলের জায়গায় নতুন হল নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বোত্তম ব্যবহারের বিষয়ে সুপারিশ প্রদানের লক্ষ্যে একটি কমিটি কাজ করছিল।
তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আল-আমিন এবং কোতোয়ালি জোনের সহকারী কমিশনার (এসি) রাজীব আল মাসুদ হলের দখল বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয় হল উদ্ধার কমিটির জায়গা বুঝে নেন। তারপর আবার বেদখলে চলে যায় হলটি।
                       আব্দুর রহমান হল


আব্দুর রহমান হল, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বড় হল। যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হল গুলোতে চলেছিল নারকীয় হত্যাকাণ্ড, নিরবে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় আত্মসমার্পন করেছিল পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর কাছে, ঠিক সেই কাল রাতে প্রতিশোধের নেশায় আব্দুর রহমান হলের ছাত্ররা রক্ত শপথ করে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত এই আব্দুর রহমান হল। ১৯৭৩ সালে কালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আব্দুর রহমান হল পরিদর্শনে আসেন। এসে হারিয়ে যান তার মুক্তিযুদ্ধ জয়ী বীর ছাত্র দের মাঝে। ঘোষণা দেন জগন্নাথ কে পুর্নাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় করার। কিন্তু আফসোস যারা এক সময় এই হল এর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল তারাই আজ হল দখল করে বসে আছে। আজ রক্ষক এখানে ভক্ষক। যারা এক সময় এই হল এর নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল তারাই এখন এ হল দখলে আছে।

ছাত্র-ছাত্রী ও প্রতিষ্ঠানের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় ছাত্র-ছাত্রীদের আবাসিক সমস্যা সমাধানকল্পে আব্দুর রহমান হল/হলের জায়গা (ঠিকানা : ৬, ৬/১ এসি রায় রোড, বটতলা, আরমানিটোলা, ঢাকা) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা প্রদানের নিমিত্তে ০১/০২/২০১০ তারিখের জবি/প্রশা-৩২(৩৫)/২০০৮/২১৪ সংখ্যক স্মারকমূলে ভূমি মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানোর জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে ২৩/০২/২০১০ তারিখের শাঃ১৮/জগঃবিঃ-৫/২০০৭/৭৩ সংখ্যক স্মারকমূলে অনুরোধ করা হয়। এ প্েেরিত ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক ০৩/০৫/২০১০ তারিখের ভূঃমঃ/শা-৮/খাজব/১৩৫/২০১০/৪৭১/২ সংখ্যক স্মারকমূলে আব্দুর রহমান হল/হলের জায়গা দীর্ঘমেয়াদী ইজারা প্রদানের বিষয়ে মতামতসহ প্রতিবেদন প্রেরণ করার জন্য জেলা প্রশাসক, ঢাকাকে অনুরোধ করা হয়।
পরবর্তীতে আব্দুর রহমান হল/হলের জায়গা’র বৈধ দাবিদার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে ফেরত প্রদান/দখল বুঝিয়ে দেয়াসহ বৈধ মালিকানা সংক্রান্ত কাগজপত্র প্রদানের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে পূনরায় ১০/০৬/২০১০ তারিখের জবি/প্রশা-৩২(৩৫)/২০০৮/১৬০৮ সংখ্যক স্মারকমূলে অনুরোধ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় কর্তৃক আব্দুর রহমান হল/হলের জায়গা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকূলে ফেরত প্রদান/দখল বুঝিয়ে দেয়াসহ এ বিষয়ে অর্পিত সম্পত্তি সংক্রান্ত প্রচলিত আইনানুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক, ঢাকাকে অনুরোধ করা হয়। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আবদুর রহমান হল : এর অবস্থায়ন আরমানি টোলার ৬, এসি রায় রোডে। শিক্ষার্থীশূন্য হলটি ঢাকা ডিসি অফিস থেকে লিজ নিয়ে পুলিশ দখল করে বসবাস করে আসছে। ঢাকা আনজুমান সংস্থা নামে একটি ভূইফোঁড় সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান জালদলিলের মাধ্যমে আবদুর রহমান হলের জমি বেদখলের চেষ্টা করছে। ১৯৯৬ সালে ঢাকা আনজুমান সংস্থা হলের মালিকানা দাবি করে আদালতে মামলা করে। পরবর্তী সময়ে মামলা সংক্রান্ত তথ্য গোপন করে এবং সরকার পক্ষের উকিলের নিষিক্রয়তায় ওই সংস্থাটি আদালত থেকে তাদের মালিকানার রায় পায়। এছাড়া মামলা পরিচালনার কাজে ওই সংস্থাটি বিভিন্ন সময় সরকারে শীর্ষ কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরিত যেসব কাগজপত্র ব্যবহার করেছে সেগুলোও সরকারে সংশ্লিষ্ট মহলে ভুয়া প্রমাণিত হওয়ায় সংস্থাটির সভাপতি কেএম আকবরের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের জানুয়ারিতে শাহবাগ থানায় মামলা হয় (মামলা নং-২১)। এ হলের জমির মালিক ছিলেন চিন্ময়ী দেবী। ১৯৬৫ সালে এটি অর্পিত সম্পত্তিতে পরিণত হয়। ১৯৮৫ সালে জবির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অন্য একটি হলে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ হলে তখন ছাত্ররা হল ছেড়ে চলে যায়। এরপর থেকে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ১৭ পুলিশ সদস্যের পরিবার বসবাস করছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে এ হলের সুনির্দিষ্ট দলিলও আছে।
             শহীদ আনোয়ার শফিক হল

শহীদ আনোয়ার শফিক হল (১ নং শরৎ চন্দ্র চক্রবর্তী রোড, মাহুতটুলি, আরমানিটোলা, ঢাকা, থানা-লালবাগ)-৪০ কাঠা।
২৬ জানুয়ারী ২০১০ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে  বলা হয়, শহীদ আনোয়ার শফিক হলটি সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের আপিল নং-২৪৫/০১ মামলা চলমান আছে। এ অবস্থায় ইজারা দেয়া আইনসম্মত নয়।
শহীদ আনোয়ার শফিক হল : আরমানিটোলার আবদুর রহমান হলের বিপরীতে অবস্থিত শহীদ আনোয়ার শফিক হল স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলে। বর্তমানে হলটির পুরনো ভবন ভেঙে নতুন বিল্ডিং তৈরি করে স্থানীয় টিন ব্যবসায়ী মোক্তার আলী গোডাউন তৈরি করেছে। একাংশের ওপর ন্যাশনাল ক্রেডিট অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক (বাবুবাজার শাখা) গড়ে উঠেছে। তাছাড়া হলের জায়গায় বেশ কয়েকটি ওষুধের দোকান রয়েছে।
                  শহীদ আজমল হোসেন হল

জেলা প্রশাসক, ঢাকা-এর উপর্যুক্ত পত্র মোতাবেক শহীদ আজমল হোসেন হল (ঠিকানা: ১৬, ১৭ রমাকান্ত নন্দী লেন, পাটুয়াটুলী, ঢাকা) আরএস-এ পূর্ত মন্ত্রণালয়ের নামে রেকর্ডভূক্ত থাকায় তা ইজারা প্রদান করা/না করা পূর্ত মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ারাধীন বিধায় উক্ত হল/হলের জায়গা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে দীর্ঘমেয়াদী ইজারা প্রদানের নিমিত্তে পূর্ত মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানোর জন্য ০১/০২/২০১০ তারিখের জবি/প্রশা-৩২(৩৫)/২০০৮/২১২ সংখ্যক স্মারকমূলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়কে ২৩/০২/২০১০ তারিখের শাঃ১৮/জগঃবিঃ-৫/২০০৭/৭৪ সংখ্যক স্মারকমূলে অনুরোধ করা হয়। বিষয়টি গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

শহীদ আজমল হোসেন হল : জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পশ্চিম গেটে পটুয়াটুলীর ১৬ ও ১৭ নম্বর রমাকান্ত নন্দী লেনে অবস্থিত শহীদ আজমল হোসেন হল। এ হলে বসবাস করে পুলিশ সদস্যদের পরিবার ও ১৭ নম্বরের কিছু অংশ দখল করেছে বিভিন্ন সমিতি। নতুন আরও অংশ দখলের জন্য পাঁয়তারা চলছে। এ হলটি জনৈক মুক্তিযোদ্ধার নামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা কিছুদিন আগে একশ’ বছরের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয় থেকে লিজ নিয়েছে। এর প্রতিবাদে গত ৮ মার্চ শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন করেছে। পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে সরকার জবি শিক্ষার্থীদের থাকার অনুমতি দেয়। ছাত্ররা হলটি ছেড়ে চলে যাওয়ার পর কয়েকবার হাতবদল হয়েছে। এর একটি অংশে পাঁচতলাবিশিষ্ট মার্কেট করেছে দখলদাররা।

                            বজলুর রহমান হল

ঢাকা সিটি করপোরেশন কর্তৃক বজলুর রহমান হল/হলের জায়গা অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে উক্ত হল/হলের জায়গার পরিবর্তে অন্যত্র সমপরিমান (কম-বেশী) জায়গা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে বরাদ্দ পাওয়ার নিমিত্তে সিটি করপোরেশনের মেয়র/প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরে যোগাযোগ করার জন্য একটি কমিটি কাজ করছে।

বজলুর রহমান হল : পুরাতন মোগলটুলী, বর্তমানে বংশালের ২৬, মালিটোলাতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বজলুর রহমান হল। সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে শহীদ জিয়াউর রহমান উচ্চ বিদ্যালয় নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, হলের কিছু জায়গায় স্কুল করা হয়েছে এবং বাকি জায়গা স্থানীয় ভূমিদস্যুরা দখল করে নিয়েছে। স্থানীয়রা জানায়, ১৯৮৫ সালের দিকে ছাত্রদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হলে ছাত্ররা হল ছেড়ে চলে যায়। এরপর স্থানীয় ভূমিদস্যুরা দখল করে। সেটি টিকিয়ে রাখতে স্কুল করে।
                                  বাণী ভবন

বাণী ভবনটি বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে রয়েছে। বাণী ভবনের স্থায়ী দখল পাওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে/হচ্ছে। এ লক্ষ্যে ছাত্র-ছাত্রী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃহত্তর স্বার্থ বিবেচনায় ছাত্রীদের আবাসিক সমস্যা সমাধানকল্পে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে থাকা বাণী ভবন/ভবনের জায়গা (ঠিকানা: ১ ঈশ্বর দাস লেন, ৩৫/৩৬ প্যারিদাস রোড, ঢাকা) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা প্রদানের নিমিত্তে ০৪/০৩/২০১০ তারিখের জবি/প্রশা-৩২(৩৫)/২০০৮/৫৭৯(ক) সংখ্যক স্মারকমূলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়। শিক্ষা মন্ত্রণালয় ৩১/০৩/২০১০ তারিখের শাঃ১৮/জগঃবিঃ-৫/২০০৭/১১৯ সংখ্যক স্মারকমূলে বাণী ভবন/ভবনের জায়গা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে দীর্ঘ মেয়াদী ইজারা প্রদানের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভূমি মন্ত্রণালয়কে নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হয়। এ প্রেক্ষিতে ভূমি মন্ত্রণালয় ২৯/০৪/২০১০ তারিখের ভূঃমঃ/শা-৬/অর্পিত/বিবিধ/১৯/২০০৮(অংশ)/২৫৪ সংখ্যক স্মারকমূলে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন, ২০০১ এর বিধান অনুযায়ী অর্পিত সম্পত্তি দীর্ঘমেয়াদী লীজ প্রদানের কোন সুযোগ না থাকায় জনস্বার্থে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাণী ভবন/ভবনের প্রস্তাবিত অর্পিত সম্পত্তি ছাত্রীদের আবাসিক হল নির্মাণের লক্ষ্যে অধিগ্রহণ করতে পারেন মর্মে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হয়। অধিগ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বাণী ভবন : ১ নম্বর ঈশ্বরচন্দ্র দাস লেনের প্যারিদাস রোডে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ‘বাণী ভবন’। এরই মধ্যে এ হলের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ বেদখল এবং একাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অধীনে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বাণী ভবনের বেদখল হওয়া জায়গার সব দলিল-দস্তাবেজ রয়েছে। এছাড়া হলসংলগ্ন স্থানীয় একটি মসজিদ নির্মাণের সময় কিছু জমি সেখানে চলে গেছে। এখানে ছাত্রীদের হল নির্মাণ করার পরিকল্পনার কথা এখনও তা সম্ভব হয়নি।
                                 ক্রাউন হল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বীপরীত পার্শ্বে পাটুয়াটুলিতে অবস্থিত ক্রাউন হল। তৃতীয় ও চর্তুথ শ্রেণীর কর্মচারীদের জন্য পটুয়াটুলীর ২৬ নম্বর হোল্ডিংয়ে ছিল পটুয়াটুলীর কর্মচারী আবাস। আর এ আবাসস্থলে এখন ক্রাউন মার্কেট নামে একটি ভবন তৈরি হয়েছে। জনৈক হাজী ওয়ালীউল্লাহর ছোট ছেলে মো. ওবায়দুল্লাহ খরিদসূত্রে ক্যানন বিল্ডিংয়ের মালিক বলে দাবি করলেও তা সম্পূর্ণ বানোয়াট। এ ভবনটি বেদখল হওয়ার নেপথ্যে সাগীর আহমদ নামে এক ছাত্রনেতার মুখ্য ভূমিকা ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।
                              নাজিমউদ্দিন হল

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে কাছে লিয়াকত এভিনিউ, বাহাদুরশাহ পার্ক এলাকায় অবস্থিত এই হলটি বিগত বি,এন,পি জোট সরকার আমলে বেদখল হয়। তখন এই হলটিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা থাকতেন। ছাত্রদল নেতা সগির আহমেদ সহ কতিপয় নেতা কর্মচারীদের জোর করে নামিয়ে দিয়ে হলটি বেদখল করে। এই হল দখলের ভাগাভাগিতে নিহত হন সগির। বর্তমানে হলটির জায়গায় মার্কেট, ফটোকপির দোকান এবং একটি টাওয়ার গড়ে তোলা হয়েছে।
             শহীদ নজরুল ইসলাম হল

শহীদ নজরুল ইসলাম হল (৫/১, ২, ৩, ৪ ও ৬, গোপীমোহন বসাক লেন
টীপু সুলতান রোড, ঢাকা থানা-সূত্রাপুর)-২০ কাঠা। গোপীমোহন বসাক লেনের ৫/১, ২, ৩, ৪ ও ৬নং টিপু সুলতান রোডের নজরুল ইসলাম হলের স্থলে গড়ে উঠেছে মাদ্রাসা। আওলাদ হোসেন দিলীপ নামে সাবেক কমিশনারের বাবার নামে জামেয়া শরিয়াহবাগে জান্নাত মাদ্রাসা ও এতিমখানা। অথচ এ জায়গাতেই এক সময় থাকত সাবেক জগন্নাথ কলেজের শিক্ষার্থীরা। নজরুল ইসলাম হলের এক্সটেনশনটি ক্ষমতার বলে দখল করে নিয়েছেন বিটিভির ক্যামেরাম্যান গোলামুন্নবী।
 
                    শহীদ শাহাবুদ্দিন হল


২৬ জানুয়ারী ২০১০ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে  বলা হয়, শহীদ সাহাবুদ্দিন হল ভূমি আপিল বোর্ডের নির্দেশে জেপ্রঢা/রা-উচ্ছেদ-১২৩/২০০৭-১০৯৫, তাং ৩১/০৫/০৯ মূলে ফারহানা হক গংকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। ইজারা দেয়ার সুযোগ নেই।
শহীদ শাহাবুদ্দিন হল : কোতয়ালি থানা এলাকায় ৮২ নম্বর ঝুলনবাড়ী লেনে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ শাহাবুদ্দিন হল দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে পুলিশের দখলে ছিল। সম্প্রতি এর দখল নিয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা। পরিত্যক্ত সম্পত্তি হিসেবে শহীদ শাহাবুদ্দিন হলে জবির শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল হিসেবে ব্যবহার শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে স্থানীয় বাসিন্দাদের হামলার ভয়ে ছাত্ররা হল থেকে বেরিয়ে যায়। শিক্ষার্থীশূন্য হলটি পাহারার দায়িত্ব দেয়া হয় আনসাদের। ১৯৯১ সালে আনসার বিদ্রোহ দেখা দিলে সেখান থেকে আনসার প্রত্যাহার করে নেয়। পুলিশকে রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব দেয়া হয়। পুলিশ হলটির দখল নিয়ে পরিবারসহ থাকতে শুরু করে। পরে দখলে নেন আওয়ামী লীগ নেতারা।
                         
                                 তিব্বত হল


৮,৯ জি, এল পার্থ লেন, আহসানউল্লাহ রোড ওয়াইজ ঘাটে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হল। দীর্ঘদিন যাবত বেদখলে আছে এ হলটি। খোজ নিয়ে জানা যায় ঢাকার তৃতীয় সাবজজ (যুগ্ন জেলা জজ) আদালতের দে: নং ৭৮/৮৫, মহামান্য হাইকোর্টের ফাস্ট আপীল নং ১০৬/৯৩ এবং মহামান্য সুপ্রীম কোর্টের সিভিল আপীল নং ১০৩৩/০২ এর মাধ্যমে প্রদত্ত ২ (ষোল) আনা অংশ স্বত্বের মর্মে রায় ডিক্রী প্রাপ্ত মো: খলিলুর রহমান বিশ্বাসের নিকট হইতে মিসেস গুলশানারা সেলিম খরিদা সূত্রে ঐ সম্পত্তির মালিক ভোগ দখলদার নিয়ত আছেন। তফসিল নং- সি.এস-২০০০, এস.এ-২২৬০ ও আর.এস-৫৩৬৬ নং খতিয়াভুক্ত এবং সি.এস-১৬, এস.এ-৪১১৮ ও আর.এস-৬৫৫৯ নং দাগের মোট ভুমি ৫৯৬০ অযুতাংশ জেলা-ঢাকা, থানা-কোতয়ালী।

২৬ জানুয়ারী ২০১০ জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে পাঠানো এক চিঠিতে  বলা হয়, তিব্বত হলটি মালিকানা দাবি করে বজলুর রহমান মৃধা নামে এক ব্যক্তি জজ আদালতে মামলা করেছেন। মামলা নং- ৮৭৫/০৮। ৮ম সহকারী জজ আদালতে মামলা চলমান আছে। তবে এ তিনটি হল ইজারা দেয়া সম্ভব না।
তিব্বত হল : আওয়ামী লীগ দলীয় সাবেক এমপি হাজী সেলিমের বিরুদ্ধে এই হল দখলে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। হল দখল করে মার্কেট তৈরির চেষ্টা করছেন তিনি। বুড়িগঙ্গার তীরে পটুয়াটুলী ওয়াইজঘাট এলাকায় ৮ ও ৯ নম্বর জিল পার্থ লেনে অবস্থিত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের তিব্বত হল, যা ৮.৮৮৯ কাঠা জায়গার ওপর র্নিমিত ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের প্রথমেদিকে এ হলের জমি দখল করে গুলশান আরা সিটি মার্কেট নামে বহুতল বিপণি বিতান তৈরির চেষ্টা করেন। এ বিরুদ্ধে ছাত্ররা কয়েকদফা আন্দোলনেও নামে। হাজী সেলিম অবশ্য জানিয়েছেন, সম্পত্তিটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নয় বরং তার স্ত্রী মিসেস গুলশান আরা সেলিমের ক্রয় করা সম্পত্তি।









No comments:

Post a Comment