বেহাল অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে একটি পরিবার

মো: মনিরুজ্জামান
যে  কোন বস্তু, বিষয়, পরিবেশ, অথবা যে কোন একটি সাবজেক্ট ভাল কি মন্দ তা বিচার করা হয় আর একটি সমগোত্রিয়ের সাথে তুলনা করে। রাত না থাকলে দিন কি বোঝা যায়না, আবর্জনা না থাকলে পরিচ্ছন্নতা বোঝা যায়না। একটি শহর কতটুকু বসবাস যোগ্য তা অন্য কোন মডেল শহরের পরিবেশের সাথে তুলনা করে বলা যায়। কেও যদি কোনদিন মিষ্টি আম না খায় তাহলে টক আম ই তার কাছে সুস্বাধু লাগবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয় কতটা মানসম্মত তা অন্যন্য বিশ্ববিদ্যালয় দেখে বোঝা যাবে। প্রত্যেকটি বৈশিষ্টের একটি মডেল মাপকাঠি থাকে, যা দেখে অন্যন্যগুলো পরিমাপ করা যায়। ধরা যাক বাংলাদেশের মডেল বিশ্ববিদ্যালয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। তার সাথে তুলানা করে অন্যন্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর অবস্থা বিচার করা যায়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে, তার পরও সাধারন কিছু বিষয়ে সমগোত্রিয়দের মাধ্যে মিল থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা:
বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ কর্তৃক অনুমোদিত ২০০৫ সনের ২৮নং আইনের মাধ্যমে ঐতিহ্যবাহী জগন্নাথ সরকারি কলেজটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয় এবং ২০০৫ এর ২০ অক্টোবর একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ৮ ফেব্রুয়ারী, ২০০৬ তারিখে উপাচার্য নিয়োগের মধ্য দিয়ে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কার্যক্রম শুরু হয়। বিলুপ্ত সরকারি জগন্নাথ কলেজ ক্যাম্পাসের ১১.১১ একর (প্রায়) জমির উপর বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি অবস্থিত।

সংকট সমুহ:
প্রায় আট বছর আগে প্রতিষ্টিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোন আবাসিক হল। পরিবহন সংস্থার একই অবস্থা। প্রায় পচিশ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য হাতে গোনা কয়েকটি পরিবহন বাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষদের ও সেই একই অবস্থা। শিক্ষদের ও নেই কোন আবাসিক ব্যাবস্থা।

প্রবাদ বাক্যে বলা হয়, “আপনি বাঁচলে বাপের নাম” শিক্ষদের যখন বেহাল অবস্থা তখন শিক্ষার্থীদের পাঠদানের প্রতি সর্বোচ্চ মনোযোগ দেওয়া সম্ভব নয় এরকম মন্তব্য বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক।

ইউজিসি সূত্র মতে, যেখানে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক ছাত্র অনুপাত ১:৪; কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:৮; হাজি দীনেশ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:১৩; ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:১৫; বুয়েটে ১:১৮; চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ১:২৮; সেখানে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষ ছাত্র অনুপাতের সঠিক অনুপাত বর্তমানে ১:৭০। এ পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ।

এবার ছাত্ররাজনীতি:
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের তৃতীয় অবস্থানে থাকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রাজনীতির কি দশা তা দেশ-দশের সবাই মোটামুটি জানেন। ক্যাম্পাসের পরিধি ছোট হওয়ায় এখানে গ্যাদারিংটা একটু বেশি। আর প্রতিনিয়ত লেগেই আছে  মারধরের মত জঘন্ন ঘটনা। এসব ঘটনা ঘটছে সঠিক রানৈতিক চর্চার অভাবে। ছাত্র সংগঠন একটি দেশের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকারযোগ্য। তৃণমূল পর্যায় থেকে সঠিক শিক্ষা নিয়ে একসময় এরাই দেশের হাল ধরবে। কিন্তু সেই মহৎ দায়ীত্ব গ্রহণ করতে যেয়ে যদি হাসপাতালের বেডে সময় কাটাতে হয়, তাহলে, পরত পক্ষে দেশটাই হাসপালের রোগীর আকার ধারণ করবে। বিশ্বদ্যিালয পড়–য়া শিক্ষার্থীদের বাবা-মা, আত্বীয়-স্বজন সন্তানকে উচ্চশিক্ষা প্রদান করতে বুকের নাড়ি ছেড়া ধনকে পাঠাচ্ছে বিভিন্ন পালিক বিশ্ববিদ্যালয়ে। নিজেকে বাবা-মা ও স্থানে বসিয়ে সন্তানকে হাসপাতালের বেডে দেখতে কেমন লাগে তা শুধু আমাদের বাবা-মা রাই জানেন।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিগত তিন মাসের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, ভাড়াটে গুন্ডা দিয়ে মারধর, সাংবাদিকের উপর হামলা, পুলিশ ও পরিবহন শ্রমিক কাছে বেদম প্রহার, যুগ্ম আহ্বায়কের উপস্থিতিতে কর্মীকে ছুরিকাঘাত, এসব ধারাবাহিক ঘটনায় প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত এমনকি শিক্ষকরা ও লাঞ্চিত হতে বাদ পড়েননি।

এহেন বেহাল পরিস্থিতিতে ও হাল ছাড়েনি জগন্নাথ পরিবার। বিশ্ববিদ্যালয়ের পিতৃতুল্য মহামান্য উপাচার্য ড. মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বিশ্ববিদ্যলয়ের সার্বিক উন্নতির জন্য লড়াই করে চলেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে প্রথম এবং নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির দিকেও তাকিয়ে আছে এই পরিবার। এখন শুধু অপেক্ষা, কবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ, ছাত্রছাত্রী এবং শিক্ষকদের আসে সেই শুভ দিন।

No comments:

Post a Comment