জবি ছাত্রের ছোট বোনের লাশ ২৪ ঘণ্টা মর্গে পড়েছিল !!!!

 জগন্নাথ ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক এ প্রকাশিত লেখা দেওয়া হল:

ময়নাতদন্ত না করেই ফরিদপুর সদরের কাশিমাবাদ গ্রামের জাকিয়া আক্তার ওরফে চম্পার (১৪) লাশ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছে তিন সদস্যের মেডিকেল টিম। গত শনিবার আবার ময়নাতদন্ত করার জন্য আদালতের নির্দেশে কবর থেকে লাশ তোলা হয়। কিন্তু এ ব্যাপারে গঠিত তিন সদস্যের মেডিকেল টিম ময়নাতদন্ত না করে লাশটি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। লাশটি গতকাল শনিবার দুপুর থেকে আজ রোববার দুপুর পর্যন্ত মর্গে পড়ে থাকে।
 গতকাল শনিবার ময়নাতদন্ত না করার ব্যাখা দিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, ‘দ্বিতীয় সুরতহাল প্রতিবেদনের সঙ্গে লাশটির বাস্তব অবস্থার গরমিল থাকায় মেডিকেল টিম ময়নাতদন্ত করেনি। তিনি বলেন, এ অবস্থায় ময়নাতদন্ত করা হলে সমস্যার সৃষ্টি হবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শাহিদুল ইসলামকে সুরতহাল প্রতিবেদন সংশোধন করে দেওয়ার জন্য মর্গে ডেকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু তিনি আসেননি এবং অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন।’
এ প্রসঙ্গে গতকাল বিকেলে সুরতহাল প্রস্তুতকারী ও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল খায়ের শেখ বলেন, ‘আমরা প্রতিবেদন প্রস্তুতের সময় বাস্তবে যা দেখেছি সে আলোকেই প্রতিবেদন তৈরি করেছি। মেডিকেল বোর্ড কী পেয়েছে বা পায়নি, তা আমার জানার কথা নয়।’
সংশ্লিষ্ট নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘কবর থেকে উত্তোলনের পর মরদেহের বাস্তব যে অবস্থা দেখা গেছে, সে আলোকেই প্রতিবেদন করা হয়েছে।’
এদিকে আজ রোববার সকালে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ আ স ম জাহাঙ্গীর চৌধুরী এক নম্বর বিচারিক আদালতের হাকিম আবদুল্ললাহ আল মাসুদকে গরমিলের বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়ে এ ব্যাপারে তাঁর আদেশ প্রার্থনা করেন। বিচারক ওই মেডিকেল টিমকে আবার ময়নাতদন্তের আদেশ দিলে দুপুর দুইটার দিকে ওই তাঁরা কাজ শুরু করে।
এই জটিলতার কারণে কবর থেকে তোলা চম্পার লাশটি ২৪ ঘণ্টা মর্গে পড়েছিল। ফরিদপুরের মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবুল ফয়েজ শাহনেওয়াজ বলেন, ‘ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে আনা হয়। মেডিকেল টিম ঘটনাস্থলে এসে ময়নাতদন্ত না করে ফিরে গিয়ে দেশের ইতিহাসে একটি নজিরবিহীন ঘটনার জন্ম দিয়েছে।’
ফরিদপুরের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মো. খসরুজ্জামান প্রথম আলো ডটকমকে বলেন, আদালতের নির্দেশে লাশ তোলার পর সুরতহাল রিপোর্ট যা-ই থাক না কেন মেডিকেল টিম ময়নাতদন্ত করতে বাধ্য। এ ক্ষেত্রে কোনো অজুহাত বিচার্য হতে পারে না।
বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ফরিদপুর শাখার সমন্বয়কারী শিপ্রা গোস্বামী বলেন, ২৪ ঘণ্টা মৃতদেহটি মর্গে ফেলে রাখা একটি অমানবিক কাজ হয়েছে। মেডিকেল টিমের উচিত ছিল আদালতের নির্দেশকে সম্মান জানিয়ে গতকাল শনিবারই ময়নাতদন্তের কাজ শেষ করা। সেটাই হতো মানবিক আচরণ। সে ক্ষেত্রে পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেটের সুরতহাল প্রতিবেদনে কী মিলল বা মিলল না, সেটা তাঁদের বিবেচনার বিষয় ছিল না।
ফরিদপুর সদর উপজেলার কাশিমাবাদ গ্রামের নবম শ্রেণীর এক মেধাবী ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করা হতো। প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বিয়ের। তা প্রত্যাখ্যান করেন মাতা-পিতাহারা মেয়েটির চাচা। পরে মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে দেওয়া হয় বিশাল মেহগনি গাছে। এ ঘটনায় হত্যা মামলা করেন মেয়েটির ভাই। গ্রেপ্তার করা হয় দুজনকে। কিন্তু ময়নাতদন্তে মেয়েটিকে হত্যা ও ধর্ষণের কোনো আলামত পাননি ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিত্সক অঞ্জন কুমার দাস। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে ফরিদপুরের বিচারিক হাকিমের আদালতে আবার ময়নাতদন্তের আবেদন করেন বাদী। এ আদালতের হাকিম আবদুল্লাহ আল মাসুদ গত বৃহস্পতিবার আবার ময়নাতদন্তের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। মেয়েটি পরদিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের ছাত্রী ছিল।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রতিবেশী সালাম মাতুব্বরের স্ত্রী পারভীন বেগম জরুরি কাজের কথা বলে স্কুলছাত্রী জাকিয়াকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে যান। ওই দিন জাকিয়ার এক চাচাতো বোনের গায়েহলুদের অনুষ্ঠান চলছিল। জাকিয়ার পরনেও ছিল হলুদ রঙের শাড়ি। পরদিন বাড়ি থেকে আধা কিলোমিটার দূরে মেহগনির বাগানে একটি গাছে ঝুলন্ত অবস্থায় জাকিয়ার মৃতদেহ পাওয়া যায়। পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়।

No comments:

Post a Comment