পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল নিয়ে জটিলতায় পড়েছেন নোবেল কমিটি।
পদার্থবিজ্ঞানীরা গত ৪ জুলাই একটি নতুন কণা আবিষ্কারের ঘোষণা দেন। তাঁদের ধারণা, এ কণাটি হলো কথিত ‘হিগস বোসন’ কণা। পদার্থবিজ্ঞানের অর্ধশতাব্দীর ইতিহাসে এ আবিষ্কারটি সবচেয়ে বড় অর্জন হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু, কণাটি আবিষ্কারের জন্য নির্দিষ্ট করে কাউকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতভাবেই জটিল। এনডিটিভির এক খবরে আজ রোববার বলা হয়, বিষয়টি ফয়সালা করতে একরকম বিপত্তিতেই পড়ে গেছেন নোবেল নির্বাচকেরা।কণাটি আবিষ্কৃত হয় ইউরোপীয় পারমাণবিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (সার্ন) এক নিরীক্ষা চলার সময়। কণাটি সম্পর্কে প্রায় একই সময়ে ধারণা দিয়েছিলেন পিটার হিগস ও সত্যেন্দ্রনাথ বসু। এ থেকে কণাটির নাম হয় হিগস বোসন কণা। কোনো বস্তুকণার ভরের কারণ ব্যাখ্যা করে এ কণাটি। তত্ত্ব অনুযায়ী, বস্তুর ভরের কারণ হিগস বোসন কণা। এটি ছাড়া বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কোনো অস্তিত্বই নেই।
ব্রিটেনের পদার্থবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের সভাপতি পিটার নাইট বলেন, ‘এটির আবিষ্কার হলো পদার্থবিজ্ঞানের জগতে ডিএনএ আবিষ্কারের সমান।’ তবে এ গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার আসছে মঙ্গলবার নোবেল জিততে পারবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে।
পদার্থবিজ্ঞানের নোবেল নির্বাচক লারস ব্রিংক বলেন, ‘এটি একটি বড় আবিষ্কার। আপাতত বলার মতো এতটুকুই।’ নির্বাচকদের অনেকেই মনে করছেন, কণাটির আবিষ্কার এখনো নোবেল জয়ের যোগ্য হয়নি। কারণ, এ কণাটি যে হিগস বোসন কণা, তা দাপ্তরিকভাবে ঘোষিত হয়নি।
কণাটির প্রকৃতির সঙ্গে তত্ত্বের হিগস বোসনের হিসাব-নিকাশ যথেষ্ট মিলে যাচ্ছে। তবে, অন্যান্য কণার সঙ্গে এর প্রকৃতি ও আচরণের তফাত কতটুকু, তা খতিয়ে দেখতে বাকি।
কার্যত ১৯৬৪ সালে ছয়জন বিজ্ঞানী একে অপরের তত্ত্ব ও ধারণার ওপরে ভিত্তি করে মাত্র চার মাসের মধ্যে কণাটি সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ ধারণা দাঁড় করান। প্রথম সারিতে ছিলেন রবার্ট ব্রোট ও ফ্রান্সিস এঙ্গলার্ট। ব্রোট ইতিমধ্যে গত হয়েছেন। এরপর আসেন হিগস। তিনি কণাটির অবশ্যম্ভাবী অস্তিত্বের তত্ত্ব দেন। এরপর ডিক হ্যাগেন, গ্যারি গুরালনিক এবং টম কিবেলও এ নিয়ে কাজ করেন। সার্নের অনেক বিজ্ঞানীও কণাটি নিয়ে পৃথকভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন।
কার্যত কণাটির আবিষ্কারের পেছনে তাত্ত্বিক ও বৈজ্ঞানিক দুই দলের ভূমিকাই সমান গুরুত্বপূর্ণ। সার্নসহ আরও দুজন নোবেলের দাবিদার। কিন্তু, মরণোত্তর নোবেল দেওয়ার নজির নেই।
নোবেলের শক্তিশালী দাবিদার হতে পারতেন হিগস। কিন্তু, লন্ডনের কিংস কলেজের পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও সার্নের গবেষক জন ইলিস বলেন, ‘হিগস অনুমান করার অনেক বছর পর কণাটি আবিষ্কৃত হয়েছে। তা-ও এটা নিশ্চিত নয় যে এ কণাটিই হিগস বোসন।’
ফ্রান্সের আণবিক শক্তি কমিশনের পদার্থবিজ্ঞানী ইটিঅ্যান ক্লেইন বলেন, কণাটির আবিষ্কার নোবেল পাওয়ার যোগ্য। তাই তাঁর মত হলো, এবার হিগস, এঙ্গলার্ট ও সার্নকে মিলিতভাবে নোবেলটি দেওয়া হোক।
নোবেল কমিটির পদার্থবিজ্ঞান শাখার সম্পাদক লারস বার্গস্ট্রোয়েম বলেন, ‘কোনো প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দিতে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য কখনো কোনো প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কার দেওয়া হয় না। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে শান্তিতে নোবেল দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের জন্য সাধারণত ব্যক্তি-উদ্যোগকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়।’
No comments:
Post a Comment