মনে হচ্ছে যুবরাজ পাঁচ দিনের জন্যও তৈরি

লেখক:
বিবার বিকেলে যুবরাজের সেঞ্চুরির খবরটা পেয়ে বেশ স্বস্তি পেলাম। যাক, ভারতীয় টেস্ট দলের ছ’নম্বর ব্যাটসম্যানের জায়গা নিয়ে সমস্যাটা মনে হয় মিটতে চলেছে।
হায়দরাবাদে ম্যাচের ফলের চেয়ে এখন যুবরাজের পারফরম্যান্স অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যুবির ব্যাটিং পরিষ্কার বুঝিয়ে দিল, এত দিন ওকে নিয়ে যে দুশ্চিন্তা করছিলাম, তা ঠিক নয়। টি-টোয়েন্টিতে ও ভাল খেললেও আমাদের চিন্তা ছিল টেস্টে আদৌ ভাল খেলতে পারবে কি না। আসলে সদ্য ক্যানসারকে হারিয়ে ওঠা একটা ছেলে সারা দিন মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে কি না, এটা নিয়েই অনেকের সন্দেহ ছিল। যুবি আজ সব জল্পনায় দাঁড়ি টেনে দিল।
শুনলাম, তিন ঘন্টারও বেশি ক্রিজে ছিল যুবি। এতক্ষণ মাঠে থাকতে পারাটাই ওর চ্যালেঞ্জ ছিল।
দলীপে যুবরাজ
তার উপর এ রকম আক্রমণাত্মক ব্যাটিং। ১৫২ বলে অপরাজিত ১৩৩ রানের ইনিংসে ২০টা বাউন্ডারি ও দু’টো ওভার বাউন্ডারি মেরেছে ও। স্ট্রাইক রেট ৮৭.৫০। এর পর আর ওর ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে না। জাতীয় নির্বাচকরা বরং যুবরাজকে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট দলে রাখা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করুন। পাঁচ-ছয় নম্বরে ব্যাট করিয়ে সুরেশ রায়নাকে দিয়ে লাভ হয়নি। এই জায়গায় যুবরাজকে দিয়েই বেশি কাজ হতে পারে। ওর মতো আক্রমণাত্মক ব্যাটসম্যানকে সমীহ করে বিপক্ষ বোলাররা। যেটা দরকার। রায়না যেটা আদায় করতে পারছে না। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তিন নম্বরে আসুক পূজারা, চারে সচিন, পাঁচে কোহলি, ছয়ে যুবরাজ।
যুবি-টোটকা/২
ডা. সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় (ক্যানসার বিশেষজ্ঞ)
এই মুহূর্তে যুবরাজ সিংহের শারীরিক কন্ডিশন যে রকম আছে বলে মনে হচ্ছে, তাতে ও টেস্ট খেলার ধকল নিতে পারবে। ওর ক্যানসারটা যে ধরনের ছিল, তাতে একবার ঠিক হয়ে গেলে ফিটনেস ফিরে পাওয়াটা সমস্যা নয়। যুবরাজের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারত ক্যানসারজনিত কষ্ট এবং কেমোথেরাপি সংক্রান্ত শারীরিক-মানসিক যন্ত্রণা। এই সমস্যাগুলো তো যুবরাজ আগেই কাটিয়ে উঠেছে। এ বার রুটিন মেনে চললে ফিটনেস ধরে রাখতেই পারবে। সে দিক দিয়ে পাঁচ দিনের ধকল নেওয়াটা ওর কাছে সমস্যার হবে না।
লড়ছেন যাঁরা
শান্ত মিত্র (প্রাক্তন ফুটবলার)
নিঃসন্দেহে, যুবরাজ আমার অনুপ্রেরণা। যুবরাজের এই লড়াই দেখার পর থেকে রোজ ভাবি, কাল থেকে আমার সকালটাও বদলে যাবে। আবার আগের মতো ছুটে বেড়াতে পারব। যে কারণে ওয়াকার নিয়ে এসে নিজেকে ফিট করার চেষ্টা করছি। বাড়িতেই যোগব্যায়ামের বিশেষ ক্লাস করছি। যুবরাজের মনের জোর দেখে আমি উদ্দীপ্ত।
রেখা দাস (গৃহবধু)
যুবরাজকে দেখে আমি হার না মানতে শিখেছি। শিখেছি, ক্যানসার মানেই নো অ্যানসার নয়। ওকে দেখে বুঝেছি মন খারাপ করে কোনও লাভ নেই। নিজেই এখন সব কাজ করছি। এমনকী ১৩ ডিসেম্বর মেয়ের বিয়ে। বিয়ের যাবতীয় কাজ আমিই করছি। ভুলে গিয়েছি আমার কেমোথেরাপি চলছে।
নমিতা দত্ত (প্রধান শিক্ষিকা)
যুবরাজের এই লড়াইটা আমাকে অনুপ্রাণিত করে। মনে জোর ফিরে পাই। সব সময় ভাবি ও যদি পারে, তা হলে আমি পারব না কেন? স্কুলে পড়ানোর মধ্যে দিয়েই আমি আমার লড়াই চালাচ্ছি।
এটাই আদর্শ ব্যাটিং অর্ডার। বোলিংয়েও ধোনিকে সাহায্য করতে পারবে যুবরাজ। ভারতের ঘূর্ণি পিচে ওর স্পিন কাজে দেবে। তবে যুবি ভাল বোলিং করলে সেটা ধোনিদের কাছে বোনাস। ব্যাটিংটাই আসল।
একটা ব্যাপারে শুধু খটকা আছে। যুবরাজের ‘রিকভারি পিরিয়ড’। মানে, একটা বড় ইনিংস খেলে বা একটা গোটা দিন মাঠে থেকে পরের দিনের জন্য ও নিজেকে ফের কতটা তৈরি করে নিতে পারছে। তবে যুবরাজ নিজেই এটা সবচেয়ে ভাল বুঝবে। সোমবার যখন ফের ব্যাট করতে নামবে, বা গায়ে-গায়েই ফাইনাল খেলবে, তখন আমরাও কিছুটা ধারণা পাব। তবে সব হার্ডলই যখন ও অনায়াসে পেরিয়ে আসতে পারল, তখন এটাই বা পারবে না কেন?

No comments:

Post a Comment